বাংলাদেশ : মল্লযুদ্ধের রঙ্গমঞ্চ- ২
আবুল হোসেন খোকন
(২৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ/ মল্লযুদ্ধের রঙ্গমঞ্চ- ২ : সুবিধাভোগী পক্ষগুলো কে কি চায়, কেন চায়)
‘ম্যাটিক্যুলাস প্লান’-এর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের ৮ মাস পূর্ণ হয়েছে। এই প্লানের সঙ্গে থাকা সুবিধাভোগী পক্ষগুলোর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে একটা প্রশ্ন রয়েছে। এটা রীতিমত হিসাবের কথা। কারণ এই চাওয়া-পাওয়াটা থাকতেই হবে এবং থেকেছে। দেখা যাক হিসাব অনুযায়ী কী সেই চাওয়া-পাওয়া এবং তা কেন?
সুবিধাভোগী পক্ষগুলোর মধ্যে সর্ব র্শীষে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সবচেয়ে বড় পাওয়া তিনি ‘সরকার প্রধান’ হয়েছেন। এই প্রাপ্তির শুরুতেই তিনি তার নামে থাকা সব মামলা বাতিল করিয়ে নিয়েছেন। এইসঙ্গে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও ট্যাক্সমুক্ত মহাসুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। নানামুখে আরও নানা কথা রয়েছে। সেগুলোতে না গিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়টি দেখা যাক।
![]() |
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে নেওয়া ব্যঙ্গচিত্র |
তার এই আজীবন ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্খার সঙ্গে আরেকটি বড় চাওয়া রয়েছে। সেটা হলো, আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শক্তির উপস্থিতি না থাকা। কারণ এটা থাকলে তার বা তার সহযোগীদের ক্ষমতার স্বপ্ন পূরণ হবে না। নিজেদের ক্ষমতায় থাকা হবে না। দেশে গণঅভ্যুত্থান হবে। এরপর ‘অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল এবং অসাংবিধানিক পন্থায় চলার’ জন্য রাষ্ট্রদোহীতার অভিযোগে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হবে। সুতরাং সুবিধাভোগী হিসেবে এখানে প্রধান লক্ষ্যই হলো- মরণপণে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তিকে ঠেকানো। এটাই ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি।
২০২৫-এর ২৬,২৭,২৮-এ গণমাধ্যম সমকাল, প্রথম আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সংবাদচিত্র
‘ম্যাটিক্যুলাস প্লান’-এর দ্বিতীয় সুবিধাভোগী পক্ষ হলো, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীসমূহ। তাদেরও প্রথম চাওয়া আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তির অনুপস্থিতি। এইসঙ্গে তাদের আরেকটি চাওয়া রয়েছে। সেটা হলো, বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিলুপ্তি। এরমধ্যে এক নম্বরে রয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকলে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধপরাধী দল, এজন্য এ দল নিষিদ্ধ থাকতে বাধ্য। আবার বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য থাকলেও কিন্তু জামায়াতের রাজনীতি থাকে না। সুতরাং তাদের প্রধান চাওয়াই এ দুটি বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিলুপ্তি। ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর শিরোনাম
ম্যাটিক্যুলাস প্লান’-এর দ্বিতীয় সুবিধাভোগী পক্ষ হলো, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীসমূহ। তাদেরও প্রথম চাওয়া আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তির অনুপস্থিতি। এইসঙ্গে তাদের আরেকটি চাওয়া রয়েছে। সেটা হলো, বাঙালি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিলুপ্তি। এরমধ্যে এক নম্বরে রয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকলে জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধপরাধী দল, এজন্য এ দল নিষিদ্ধ থাকতে বাধ্য। আবার বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্য থাকলেও কিন্তু জামায়াতের রাজনীতি থাকে না। সুতরাং তাদের প্রধান চাওয়াই এ দুটি বিষয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিলুপ্তি।
শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের ঘটনায় তৃতীয় সুবিধাভোগী পক্ষ হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। এই পক্ষের প্রধান চাওয়া ছিল, তাদের অতীতের সমস্ত অপকর্ম ও অপরাধের দায়মুক্তি। যতো মামলা এবং অভিযোগ ছিল সেগুলোর বিলুপ্তি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এরইমধ্যে তারা এই প্রত্যাশার প্রায় সবটাই পেয়ে গেছে। এই-টা না হলে তাদের পক্ষে রাজনীতির ময়দানে মোটেও ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় ছিল না। বরং তাদের বিপর্যয় এবং বিলুপ্তি অনিবার্য ছিল।
বাকি সুবিধাভোগী পক্ষের মধ্যে রয়েছে সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি-গোষ্ঠী-প্রতিষ্ঠান। ‘ম্যাটিক্যুলাস প্লানে’ সহায়তা করার বিনিময়ে এদের প্রত্যাশা মূলত একটাই। সেটা হলো, তাদের নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা এবং অপরাধকর্মে অবাধ অধিকার ভোগ করা। কারণ এরা সব সময়ই সুবিধাবাদী চরিত্রের, যখন যেখানে বেশি সুবিধা তখন সেখানেই এরা নিজেদেরকে বিকিয়ে দিয়ে টিকে থাকে। রাষ্ট্র ও সমাজে এরা টিকে থেকে শোষণ, লুণ্ঠন, দুর্নীতি-অনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য রচনা করে। সুতরাং ‘ম্যাটিক্যুলাস প্লানে’ সহায়তা দেওয়ার বিনিময়ে এদের সেই সুযোগ-সুবিধাটি আরও বেশি করে চাওয়ার।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে সবাই এখন চাওয়া-পাওয়া পূরণে ব্যস্ত। দেশ, মাটি, মানুষ বিপণœ হতে থাকলেও এদের কিছু যায় আসে না। কার এরা দেশ, মাটি, মানুষ নিয়ে ভাবে না। এরা ভাবে শুধুই নিজেদের ক্ষমতা এবং উন্নত ভাগ্য নিয়ে। এরা সেটাই করে চলেছে। ফলে দেশে আগের চেয়ে বেশি করে শোষণ, লুণ্ঠন, অনিয়ম, দুর্নীতি দোদন্ড প্রতাপের সঙ্গে চলছে। মাঠ পর্যায়ে চার থেকে ছয়গুন বেড়েছে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজীসহ অপরাধকর্ম।
26 GwcÖj †WBwj ÷vi-G cÖKvwkZ Qwe
এদিকে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে বিভোর ড. ইউনূসের সরকার নির্বাচনের তারিখ নিয়ে টালবাহানার পর টালবাহানা করে যাচ্ছে। নিজেদেরকেই জনগণের সবচেয়ে উপযুক্ত বলে প্রচার করে এবং এ নিয়ে নানা বিভ্রান্তি-বিতর্ক ছড়াচ্ছে। তবে এটাও খেয়াল রাখছে, মানুষজনকে যেন খুব বেশি খেপিয়ে তোলার পথে পা বাড়ানো না হয়। তারা যেন গণঅভ্যুত্থানে নেমে পড়তে বাধ্য না হয়। সে কারণে সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে চলা হচ্ছে। নিয়ম-কানুন-আইন-সৃঙ্খলা রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সুবিধা প্রত্যাশিদেরকে যা ইচ্ছে তাই করতে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই জনগণ বা মানুষবিরোধী হরিলুট অবস্থার সুযোগ করে দিয়ে স্বার্ধবাদী অপচক্রগুলোকে খুঁশী রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক কথায়, ক্ষমতাসীনরা মগের মুুলুকের মত দেশকে চলতে দিচ্ছে। তারা কোন বেআইনি বা অবৈধ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। ফল হিসেবে স্বাধীনতা পেয়ে দুর্বৃত্তরা উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। আর জনগণ পরিণত হয়েছেন এদের নির্মম শিকারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message