শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪

বিদেশ ভ্রমণে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানী

বিদেশ ভ্রমণে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানী
-আবুল হোসেন খোকন

স্বপরিবারে ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলাম গেল মাসেদিনটি ছিল জুলাই মাসের ৫ তারিখ শনিবারহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হয়ে ছিল যাত্রা পর্বশুভাকাক্সিক্ষদের অনেকেই বলেছিলেন, বাংলাদেশ বিমানে যাবেন নানানান ঝক্কি-ঝামেলার মুখোমুখী হতে হবেতার বদলে বিদেশি বিমানে যান, ঝামেলা হবে নাসেইমত টিকেট কেটেছিলাম জেট এয়ারেশুভাকাক্সিক্ষদের কথা ঠিক, যথাসময়ে এয়ারপোর্টে গিয়ে ওদের কাউন্টারের টিকেট দেখাতেই লাগেজ নিয়ে নিলো এবং এয়ারের বোর্ডিং পাস দিয়ে দিলোআমাদের লাগেজে শেভিং রেজার, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি থেকে ব্যবহারিক সব কিছুই ছিলএসব নিয়ে কোন ঝামেলা হলো নাস্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে সব কিছু বিমানে পাঠিয়ে দেওয়া হলোকিন্তু যতো গণ্ডগোল দেখলাম বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টেলাইনে দাঁড়ানোর পর দেহ এবং হাতব্যাগ তল্লাশীর সময় দেখলাম অনেকের অনেককিছু রেখে দেওয়া হচ্ছেতারমধ্যে রেজার বক্স, কাঁচি, ব্লেড ইত্যাদিও রয়েছেভাগ্যিস ওগুলো লাগেজে পাঠিয়েছিলামনইলে হয়তো আমাদের এসব জিনিসপত্রও খুঁইয়ে যেতে হতো
আমাদের ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টে নারী-পুরুষের দেহ এবং ব্যাগ তল্লাসীতে যে কাণ্ড দেখলাম কলকাতা নেতাজী সুভাস চন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসবের কোন বালাই নেইযান্ত্রিক স্ক্যানিং মেশিনের ভেতর দিয়ে যেতে হলো, তারপর সব শেষশুধু আমার পাসপোর্টে পেশা হিসেবে জার্নালিস্টলেখা আছে বলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে এক মিনিট সময় চাইলেনতারপর পাসপোর্টটির কটি পাতা ফটোকপি করে ফেরত দিয়ে দিলেন, ঈশ্বরদীসহ কয়েক স্থানে মৈত্রী ট্রেনে অভিযান চালিয়ে ভারত ফেরত যাত্রীদের তাব লাগেজসহ লক্ষ লক্ষ টাকার বৈধ মালামাল গণহারে কেড়ে নিয়ে যায় বর্ডার গার্ড টিম
যারা ওয়াকেবহাল তারা কিন্তু জানেন, ব্যাগেজ রুল বলে একটি আইন আছেজাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থ বিল ২০১৩-এর মাধ্যমে শিথিল করা রুল অনুযায়ী, স্থল পথের যাত্রীরা ৪০০ ডলার পর্যন্ত মূল্যমাণের মালামাল বিনা শূল্কে নিয়ে আসতে পারবেনএই রুল অনুযায়ী, সব পথের যাত্রীরা বিনা শূল্কে ২২ ইঞ্চি প্লাজমা, এলসিডি ও এলইডি টিভি বিনা শূল্কে সঙ্গে আনতে পারবেনসুতরাং ৪০০ ডলার মানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩২ হাজার টাকার বৈধ মালামাল বিনা শূল্কে নিয়ে আসতে পারবেনএখানে এই জামা এতোটা কেন, এই কাপড় এতো কেন, শাল কেন, কসমেটিকস কেনÑ এসব বলার কোন সুযোগ নেইআর মালামার বৈধ কি অবৈধÑ তা দেখার জন্য এই ডিজিটাল যুগে ব্যাগ খুলে খুলে হাতড়ে হাতড়ে দেখারও প্রয়োজন নেইস্ক্যানিং মেশিনে ঢোকালেই ব্যাগ বা লাগেজে কি জিনিস আছে, কতোটা আছেÑ তা দেখা যায়আর এসব মানুষকে দেখতে হয় না, কম্পিউটারই দেখে দেয়
এই বাস্তবতায় আমাদের দেশের ইমিগ্রেশন, কাস্টমস বা চেক পয়েন্টগুলোতে যা চলছেÑ তা রীতিমতো আইনবিরোধী, জনবিরোধী এবং ভ্রমণবিরোধীএতেকরে শুধু ভ্রমণকারীরা যে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন তা নয়, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গুরুতরভাবে বিনষ্ট হচ্ছেএ থেকে রক্ষা পেতে হলে এইসব পয়েন্টের ডাকাত-ছিনতাইকারীদের কঠোর হস্তে নির্মূল করতে হবেএটা করা জরুরি
    আবুল হোসেন খোকন : সাংবাদিক ও লেখক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for Message