![]() | |
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে নেয়া ব্যঙ্গচিত্র |
[২ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ]
দৃশ্যপট-এক : সাম্রাজ্যবাদী `ম্যাটিক্যুলাস প্লান’ অনুযায়ী উৎখাত হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২০২৪ খ্রিস্টাব্দে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, `তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রামসহ মিয়ানমারের একটা অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানাতে চায়। বে-অব বেঙ্গলে একটি সামরিক ঘাঁটি করতে চায়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি সায় দিচ্ছি না। এটা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে আমার অপরাধ।’ তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, `এখানে এয়ারবেইজ করে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কার উপর হামলা করবে? যদিও তারা একটা দেশকে দেখায়, কিন্তু আমি তো জানি- আসলে তা নয়।’
এই বক্তব্যের তিন মাস ১৩ দিনের মাথায় তাঁকে `ম্যাটিক্যুলাস প্লান’-এর অংশ হিসেবে উৎখাত হতে হয়। তারপর তিনি বলেছিলেন, `আমি যদি তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) দাবি মেনে নিতাম এবং সেন্টমার্টিনকে তাদের হাতে তুলে দিতে রাজী থাকতাম, তাহলে আজীবন রাষ্ট্রক্ষমতায় ক্ষমতায় থাকতে পারতান।’
এই উৎখাত পরবর্তী প্রেক্ষাপটের আট মাস পর গৃহযুদ্ধ কবলিত মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ সহায়তার নামে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকার অতি গোপনে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের মাটি দিয়ে করিডোর দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ করিডোর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা স্বীকারও করেছে। অবশ্য এ পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতে অংশ নেওয়া বিএনপি, জামায়াতসহ বর্তমানে প্রকাশ্যে থাকা সবগুলো রাজনৈতিক দল। তাদের কথা, `একটি অনির্বাচিত সরকার এভাবে করিডোর দিতে পারে না। এরফলে বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে।’ বিবৃতিদাতারা `কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এমন একটি বিষয়ে’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানান। সব মিলিয়ে এখন সর্বমহলে একটাই কথা, শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার কথাই সত্যে পরিণত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী পশ্চিমা কয়েকটি দেশ অনেকদিন ধরেই এমন একটি করিডোরের জন্য বাংলাদেশকে পরামর্শ ও প্রস্তাব দিয়ে আসলেও শেখ হাসিনা সরকারসহ কোন নির্বাচিত সরকারই ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় এতে সায় দেয়নি। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর মন্তব্য হলো, `রাখাইনে মানবিক করিডোরের আড়ালে লুকিয়ে আছে ইসরাইলের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। এরফলে বদলে যতে পারে বাংলাদেশের মানচিত্র (এই বদলে যাওয়ার কথাটি ৩০ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও স্বীকার করেছেন)।
দৃশ্যপট- দুই : ওয়াশিংটনে গত ২৮ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের একটি ব্রিফিং অনুষ্ঠান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থাপনের বিষয়বস্তু ছিল, `বার্মা, মানবিক সংকট এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন’। কীভাবে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে পরাজিত করা যায়, চীনের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র কতো সহজে কীভাবে মিয়ানমারের দখল নিতে পারে, কীভাবে চীনকে পরাজিত করে মিয়ানমারের সবকিছুতে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়- ইত্যাদি বিষয় অনুষ্ঠানে আলোকপাত করা হয়। বলা হয়, `বার্মার সামরিক জান্তা সরকার এখন পর্যন্ত দেশের এক তৃতীয়ংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এই দেশটিকে দখলে নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।’ বলা হয়, `মিয়ানমারকে কাজে লাগিয়ে ভারত মহাসাগরে চীনকে পরাস্ত করার এটাই সুযোগ।’
ম্যাটিক্যুলাস প্লানের পরবর্তী পর্ব : উপরের দুই দৃশ্যপট থেকে পরিস্কার- কী ঘটতে চলেছে? এটা যে সাম্রাজ্যবাদী `ম্যাটিক্যুলাস প্লান সাম্রাজ্যবাদী `ম্যাটিক্যুলাস প্লান’-এর পরবর্তী পর্ব তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক সরকারকে ক্ষমতায় রেখে তাদের ব্যবহার করে এভাবেই সব `প্লান’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্লান অনুযায়ী, মিয়ানমার বা বার্মা দখল, খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানো, বে-অব বেঙ্গলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপকে হস্তগত করার চেষ্টা দিয়েই যে মিশন শেষ করা হবে- তা নয়। `প্লান’ আরও বড়। শুধু চীনকেই এখানে টার্গেট করা হয়নি, টার্গেটে আছে ভারতও। ভারতীয় টার্গেটে আছে, দেশটিকে খন্ড-বিখন্ড করে দেওয়া। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জঙ্গী মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং পাকিস্তানকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই চলমান আছে। এ কারণেই `ম্যাটিক্যুলাস প্লান’-এর অংশীদার ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারে বারেই ভারতের সেভেন সিস্টার নিয়ে কথা বলে থাকেন।
এখানে শেষ কথায় একটি বিষয়ই তুলে ধরার, তা হলো- বাংলাদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তি এতোকিছু করবে- আর চীন, ভারত, মিয়ানমার জান্তা বসে থাকবে? বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক মানুষও কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবেন? না, মোটেও তা নয়।
অতএব সবমিলে ফলাফল ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ শিকার হবেন ষড়যন্ত্রমূলক সেই ভয়ঙ্কর পরিণতির। এখন দেখা যাক, সময় কী বলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message